সোনাই নদী প্রবেশ পথে
হতেই হত পার
সে আজ
ফেরি ঘাটের কাছে
ধুসর পানা , ধুল-আগাছায়
মুখ লুকিয়ে আছে
নদীর পারে ছোট্ট বারিষ গ্রাম
আসাম দেশের মানচিত্রে
ছিল না তার নাম
ছিল না তার কুলিন ইতিহাস;
দশ- বিশ ঘর সরল মানুষ
মরশুমি ধান চাষ
দুঃখ ছিল সূখ ও ছিল
সোনাই ছিল সাথে
চাঁদ ঝিক মিক জোছনা যখন
খেলতো মিহি রাতে
ঠিক যেন এক রূপোর তলোয়ার,
বারিষ যেন রাজ পুত্তুর
মায়ার গড়ন তার
বৃষ্টি ছিল নিত্য সহচর;
আশে পাশের অন্য গ্রামে
আর যে কটা ঘর
ভাবত সবাই বারিষ গাঁয়ের কাছে
বৃষ্টি পোষার যাদু টোনা
উলুক সুলুক আছে।
হিংসে হত, ভাবত এটা
কেমন করে হয়!
বারিষ ভরা বৃষ্টি-সবুজ
ন্যায্য মোটেই নয়।
গাঁয়ের মাথা, আর যে কটা
কেউ কেটা সব ঘর
সবাই মিলে ফন্দি এটে
পাঠিয়ে দিল চর,
বারিষ তো আর দূর মোটে নয়!
এই তো হাতের কাছে
দেখতো গিয়ে কোন আছিলায়
বৃষ্টি বাঁধা আছে!
হপ্তা গেল, খবর এলো
আজব ব্যাপার বটে!
সোনাই পাড়ের বারিষ গাঁয়ে
যাদু টোনাই ঘটে!
ওরা বুকের মাঝে প্রাণ রাখেনা!
জিয়ন রাখে গাছে
শিমুল পলাশ অক্ষয় বট
হেতাল যত আছে---
তাল সুপুরি গরান ঝাঁকে ঝাঁকে
বারিষ বাসি-র প্রাণ ভোমরা
গাছের মাঝেই থাকে।
এই মামলা ! পাইক ছুটে যায়
হুকুম আছে, “প্রাণ ভোমরা -
ছিনিয়ে নিয়ে আয়”।
খবর যেতে বারিষগাঁয়ে
শুধুই হাহাকার ,
" সবুজ হয়ে বাঁচবো না তো আর !
ওই শাল - পলাশের কাছে
ভাবলো ওরা জিয়নকাঠি
লুকিয়ে রাখা আছে ! "
বাহ রে মানুষ
নামবি কত আর !
এতো রূপকথা নয় ! সপ্তসাগর
সাঁতরে হলেই পার ,
বুড়ো বটের ফোকলা মুখের ফাঁকে
সাতরাজাদের বক্ষমানিক
গুপ্ত রাখা থাকে !
প্রাণভোমরা এরেই নাকি কয় !
রক্ত-মাসের হৃদয়খানা
যেমনতর হয় ,
সেই তুচ্ছ পরাণ
ছিনিয়ে নিতে লোভ শানাবি গাছে !
ফেলনা জিনিস দেহেই রাখি
বুকের মাঝেই আছে ।
তাই যদি চাই... শানাস তলোয়ার
শরীর দিয়ে বাঁধবো বেড়া
সাধ্য দেখি কার !
অনেক জনম ধরে
কলজেটা নয়, মন রেখেছি
সবুজ পাতার ঘরে ।
সবুজ পাতার ছাউনি ঘরে
মনের লুকোচুরি
সবুজ হবো... সবুজ হবার
হাজার ইচ্ছেনুড়ি
যখন খলবলিয়ে লুটিয়ে পড়ে ঘাসে
বারিষ ধুয়ে বৃষ্টিকণার
স্বপ্ন নেমে আসে ।
তোর দো-ধার তলোয়ার
স্বপ্ন কাটার সাহস আছে তার?
স্বপ্ন কাটার সাহস না থাক...
ধার তো ছিল তার !
তাদের দো – ধার তলোয়ার ...
বৃষ্টি কেটে হানল আঘাত
বারিষ গ্রামের গায়ে ...
মেয়ে- মরদ , বৃদ্ধ – শিশু
গোয়াল ভরা অবোধ পশু
শরীর জুড়ে গড়ল প্রাচীর
রুখতে তলোয়ার ...
লোহার না হোক ... দো – ধার না হোক
স্বপ্ন গড়ার সাহস ছিল তার ।
রূপকথা – তে এমন যদি হয় ...
হতেই হত বারিষ গাঁয়ের জয় !!!
কিন্তু এতো রূপকথা নয় !!
বছর করে পার ...
থামল লড়াই ... থামল তলোয়ার
থামল লড়াই ... বৃষ্টি গেল ঘুচে
মানচিত্রে সবুজ রঙের
আদর গেল মুছে ...
বাঁচল যারা চার-পাঁচ জন
ক্লান্ত বারিষকর
ছাড়ল তাদের বাপ-দাদাদের ঘর ...
ছাড়লো বারিষ গাঁও ...
সোনাই নদে ভাসল তাদের
হিজল কাঠের নাও ।
আসাম দেশের গল্পকথায়
সব বুড়োরাই কয় ...
আসাম দেশে গভীর রাতে
বৃষ্টি যদি হয় ...
মানুষ ঘুমোয় ... শহর ঘুমোয়
আকাশ শুধু হাসে ...
ফিসফিসিয়ে বাতাস বলে
“কেউ তো জেগে আছে !”
“কেউ তো জেগে আছে !”
“কেউ তো জেগে আছে !”
তন্দ্রা ফেলে ... নদীর দিকে চাও
বৃষ্টি ভিজে হাসছে দেখ
হিজল কাঠের নাও ।।
-- RAJAT PODDER